২ দিনের বান্দরবান ভ্রমণ

বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম বান্দরবান যাবার কথা, একটা রিসোর্ট ও অনেকদিন ধরে ফলো করছিলাম, তবে সময়, সুযোগ ম্যাচ করে প্ল্যান করতেই পারছিলাম না। শেষমেশ ২২ মে ২০২২ বিকাল বেলায় হঠাত করেই ভাবলাম আজই চলে যাই বান্দরবান। বউকে বলার সাথে সাথেই সে রাজি, এবার আর ঠেকায় কে!

বাসের টিকিট, রিসোর্ট বুকিংঃ

প্ল্যান হবার সাথে সাথেই রিসোর্টে কল দিলাম, তারা কনফার্ম করলো রুম এভেইলেবল আছে। তাদের কনফার্মেশন এর পর বাসের টিকিট চেক করলাম। আবদুল্লাপুর থেকে রবি এক্সপ্রেস এর একটা বাস ছিল কিন্তু সেটায় সামনের সীট ফাঁকা ছিল না, তাই শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের হুন্দাই বাসের টিকিট করলাম। আমার আবার a3, a4 সীট ছাড়া ভালো লাগে না। ট্যুর শেষ করে ঢাকায় আসার পর অবশ্য বুঝতে পারলাম যে শ্যামলির ডিসিশন টাই বেস্ট ছিল রবি এক্সপ্রেসের চেয়ে। কেন সেটা শেষদিকে বলছি।

বাস টিকিট বুক করার পর রিসোর্ট বুকিং এর কাজ শুরু করলাম, কিন্তু এখানে বাধল বিপত্তি, আগেরবার যখন এভেইলেবল আছে কিনা জানতে চাইলাম, তখন বলল এভেইলেবল আছে। এখন বলছে শুধু গ্রাউন্ড ফ্লোরে এভেইলেবল আছে। শেষমেশ ২ দিনের জন্য ২ টা আলাদা রুম বুক করলাম। প্রথম দিন ২ তলায়, আর দ্বিতীয় দিন গ্রাউন্ডে। কোন রুম কেমন ছিল সেটার ডিটেইলস পরে দিচ্ছি।

যাত্রা শুরুঃ

বিকাল ৫ টার দিকে প্ল্যান শুরু, সেটার এক্সিকিউশন শুরু হয়ে গেল কয়েক ঘণ্টা পরেই। আমাদের বাসে উঠার সময় ছিল রাত ১১:৪৫ মিনিটে আরামবাগ কাউন্টার থেকে। তাই ৯:৪৫ এর দিকে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। প্রায় ১১:১০ মিনিটের দিকে পৌঁছে গেলাম আরামবাগ কাউন্টারে, কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বাস চলে আসলো, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৫ মিনিট আগেই বাস চলে এসেছিলো। বাসে উঠে বসলাম, সময়মত ই ছেড়ে গেলো।

বাস রিভিউঃ

আমাদের বাস ছিল শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের হুন্দাই। গাড়ী নাম্বার সম্ভবত ১২-০৪৮৮। বাসের এক্সপেরিএন্স ভালোই ছিল, এছাড়া ড্রাইভার যথেষ্ট সাবধানে ড্রাইভ করেছেন যেটা ভালো লেগেছে। কোন ধরনের তাড়াহুড়া করেননি।

যাত্রা বিরতিঃ

বাস যাত্রা বিরতি দিয়েছে কুমিল্লার জমজম হোটেলে। মাঝরাতের জন্য কিনা জানিনা তবে এদের খাবার দাবার খুব একটা ভালো লাগেনি। ২ প্লেট বিফ খিচুড়ির বিল রাখল ৬৩০ টাকা!

জমজম হোটেল কুমিল্লায় খিচুড়ি

রিসোর্টে পৌছালাম

সারারাত জার্নির পর সকাল ৭ টার দিকে রিসোর্টের সামনে বাস থেকে নামলাম। তখন বৃষ্টি হচ্ছিলো, তবে বাসের ড্রাইভার এবং স্টাফরা ভালোভাবেই নামিয়ে দিয়ে গেলো, রিসোর্টের সামনে থেমে হর্ন দিয়ে সিকিউরিটি গার্ড কে ছাতা নিয়ে আসতে বলল, এরপর আমরা সেই ছাতার প্রটেকশন নিয়ে ঢুকলাম রিসোর্টে।

রিসোর্টের ভিতরের একটা ভিউ, এইগুলো ট্রি হাউস

ওহ এতক্ষণেও রিসোর্টের নাম বলা হয়নি। আমরা উঠেছিলাম বান্দরবানের গ্রীনপীক রিসোর্টে। এটা বান্দরবান শহরের প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার আগে চট্টগ্রাম – বান্দরবান রোডের পাশেই। লোকেশন টা একদিক দিয়ে ভালো, আরেকদিক দিয়ে কিছুটা খারাপ।

খারাপ দিকটা হচ্ছে এই জায়গা থেকে শহরে যাবার ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। লোকাল কিছু সিএনজি, মাহিন্দ্রা চলে কিন্তু আমি কখনো সিট খালি থাকতে দেখিনি। ফ্যামিলি নিয়ে গেলে এমন বাহনে চলা খুবই মুশকিল।

রিসোর্টের চেকইন টাইম দুপুর ১ টায়। কিন্তু আমরা তো চলে এসেছি সকাল ৭ টায় -_- । রিসিপশনে সোফা রাখা ছিল, কিছুক্ষণ বসলাম কিন্তু এসি অফ থাকার কারণে ভ্যাপসা গরম লাগছিলো, বাইরে আবার বৃষ্টি। হঠাত চোখে পড়লো রিসিপশন টেবিলের পাশে একটা বিএমডব্লিউ রাখা! চলে গেলাম সেই বিএমডব্লিউ নিয়ে সুইমিং পুলে। কিছুক্ষণ সুইমিং পুলে বসে থাকার পর দেখি আরেক গেস্ট মার্সিডিস বেঞ্জ নিয়ে চলে আসলো! এইগুলা আসলে কি সেটা নিচের ছবি থেকে বুঝে নিতে হবে 😛

হঠাত চোখে পড়লো রিসিপশন টেবিলের পাশে একটা বিএমডব্লিউ রাখা! কিছুক্ষণ সুইমিং পুলে বসে থাকার পর দেখি আরেক গেস্ট মার্সিডিস বেঞ্জ নিয়ে চলে আসলো!

ব্রেকফাস্ট

কিছুক্ষণ সুইমিং পুলে বসে থেকে ভাবলাম ব্রেকফাস্ট টা করে আসি, ততক্ষণে ক্ষুধাও লেগেছিল আমাদের ২ জনেরই। ততক্ষণ পর্যন্ত আইডিয়া ছিল না যে সেই দিনটা ব্রেকফাস্ট ছাড়াই কাটতে যাচ্ছে।

যাই হোক, রিসিপশনে গিয়ে বললাম ব্রেকফাস্ট এর কি করবো। কিভাবে অর্ডার করবো। এখানে বলে রাখি, আগের রাতেই আমি রিসিপশনে জিজ্ঞেস করেছিলাম ব্রেকফাস্ট এর কথা, যেহেতু সকালে পৌঁছে যাবো। ভালো বাসগুলো সব রাতেই ছেড়ে আসে। রাতে যখন জিজ্ঞেস করলাম, তখন বলেছিল এইখানে তো খরচ বেশি, আপনি বরং আশেপাশে থেকে ব্রেকফাস্ট করে নিয়েন। আমি যদিও আমার খরচ বাঁচানোর দায়িত্ব উনাকে দেইনি, তাও কিছু বললাম না। জিজ্ঞেস করলাম প্রি-অর্ডার করা লাগবে কিনা, উনি সেটার কোন উত্তর ক্লিয়ারলি দেন নি, তো ভাবলাম হয়তো এসে বলেই হবে, অথবা আশেপাশে ভালো অপশন আছে।

এবার গিয়ে যখন জিজ্ঞেস করলাম উনার উত্তর ছিল আগের মতই, আশেপাশে থেকে করে আসেন। এখানে প্রি-অর্ডার ছাড়া কোনভাবেই পসিবল না। আমি বললাম আগে তো আমাকে বলেননি যে প্রি-অর্ডার করতে হবে। উনার উত্তর ছিল, ওহ এটা বলা উচিত ছিল। কোন রকম আন্তরিকতা উনার মধ্যে ছিল না, যেটা অত্যন্ত হতাশাজনক।

উনার কথা মত হালকা বৃষ্টির মধ্যে ১০-১৫ মিনিট রাস্তার পাশে সিএনজির জন্য দাড়িয়ে থেকেও যখন খালি কিছু পেলাম না, তখন ব্রেকফাস্টের আশা বাদ দিয়ে রিসোর্টের একটা জায়গায় গিয়ে বসে সময় কাটাতে থাকলাম।

রুমে চেকইন

বসে বসে সময় কাটাতে বিরক্ত লাগছিলো, তার মধ্যে রাতে খুব একটা ঘুমাইনি। ক্ষুধা, ঘুম সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট হলো কয়েক ঘণ্টা সময় যেতে।

১১ টার কিছু সময় পর রিসিপশনে গেলে সেখানকার ফর্মালিটি শেষ করে চেকইন করলাম, ফাইনালি! রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আগে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ওহ রুমে যাবার আগেই রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের অর্ডার করে গেলাম। ১ টা পর্যন্ত ওরা লাঞ্চের অর্ডার নেয়, আর ডিনারের অর্ডার নেয় রাত ৮ টা পর্যন্ত।

১০৪ নাম্বার রুম এটা, প্রথম দিন এটাতেই ছিলাম

২ টার দিকে লাঞ্চ করলাম। এরপর আবার রুমে গিয়ে রিল্যাক্স করলাম। প্রথম দিন আমাদের রুম ছিল ১০৪। এটা থেকে বাইরের ভিউ ভালোই দেখা যায়, তবে ওদের বেস্ট রুম ৩ নাম্বার বিল্ডিং এ, ৩০২, ৩০৩, ৩০৪, ৩০৫ সম্ভবত ওই রুমগুলোর নাম্বার। এই বিল্ডিং টা সুইমিং পুলের পাশেই। আর রুমের বারান্দা থেকে চট্টগ্রাম – বান্দরবান হাইওয়ে দেখা যায়।

বাই দ্য ওয়ে, আমরা যখন বুক করেছি তখন রিসোর্টের ৩০% অফার চলছিলো, ৩০% অফারে ২ রাতের জন্য খরচ পড়েছিলো ৯১০০ টাকা, অর্থাত প্রতি রুম প্রতি রাতের জন্য ৪৫৫০ টাকা, সাথে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট।

বাকি দিন পুরোটাই রুমে বসে টুকটাক কাজ করে আর টিভি দেখে কাটিয়ে দিলাম। ওহ রিসোর্টে রবির বেশ স্ট্রং নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম, যার কারণে ইন্টারনেট ডিপেন্ডেন্ট কাজ করতেওঃ প্রবলেম হচ্ছিলো না।

কাজের মাঝে টুকটাক ফটো সেশন ও হয়ে গেলো বউ এর কল্যাণে

সন্ধ্যার পর ঘন্টাখানেক সুইমিং করলাম, ওদের সুইমিং পুল টা মাত্রই তৈরি হয়েছে। যার কারণে পুল ছাড়া আর কিছুই নেই, যেমন কোন জুস বার।

৮ টার দিকে ডিনার করে ফেললাম। ডিনারের মেন্যুতে স্পেশাল আইটেম ছিল ব্যাম্বু চিকেন। এই আইটেমটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে ওদের খাবারের মধ্যে, পরেরদিন ডিনারেও আমরা সেইম আইটেম নিয়েছিলাম।

ব্যাম্বু চিকেন আনব্যাম্বু (ইন্সপায়ারড ফ্রম আনবক্সিং 😛 ) করার ভিডিও দিয়ে দিচ্ছি এখানে।

https://www.youtube.com/shorts/QqvpaKTBxgc

দ্বিতীয় দিন

আগের রাতে ডিনারের সময় রেস্টুরেন্টের স্টাফ দের জিজ্ঞেস করেছিলাম বান্দরবান শহরের স্পটগুলো কিভাবে ঘুরে দেখা যায়, আমরা যেহেতু ২ জন, তাই তারা সাজেস্ট করলো সিএনজি অথবা মাহিন্দ্রা অর্থাৎ ৩ চাকার বাহন নিয়ে ঘুরতে। কিন্তু আমার মনে হলও এসব রাস্তায় এমন গাড়ীতে ঘুরলে ভালো মজা পাওয়া যাবেনা। তাই ভাবতে থাকলাম।

এই সময়ে আরও ২ জনকেও দেখলাম, তারা রেস্টুরেন্টের স্টাফ দের সাথে সেইম ব্যাপারেই কথা বলছে। তাদের অফার করলাম আমরা একসাথে একটা চাঁদের গাড়ী নিয়ে ঘুরতে পারি। তারা রেসপন্স করতে সময় নিলো, এর মধ্যে আমরা ফাইনাল করলাম যে ২ জন হলেও চাঁদের গাড়ীতেই যাবো।

রেস্টুরেন্টের লোকদের রেফারেন্সে চাঁদের গাড়ী এভেইলেবল পাওয়া গেলোনা। এ তো আরেক দুঃসংবাদ। অতঃপর, ফেসবুকের শরণাপন্ন হলাম, কিছু পেইজ পেলাম চাঁদের গাড়ী রিলেটেড, ওইখান থেকে নাম্বার নিয়ে কয়েকটাতে কল দিলাম আর একটা নাম্বারে সমাধান ও পেয়ে গেলাম।

সারাদিনের জন্য চাঁদের গাড়ী নিলাম ৭০০০ টাকায়, সাথে ৩০০ টাকা পার্কিং চার্জ নীলগিরির। অর্থাৎ টোটাল ৭৩০০ টাকা গাড়ীর খরচ। সিএনজিতে গেলে ৩৫০০ + ৩০০ খরচ হতো।

রাতে যে ২ জনকে অফার করলাম উনারাও ফোন দিয়ে কনফার্ম করলেন যে যাচ্ছেন আমাদের সাথে। উনারা সিলেট থেকে এসেছিলেন, ইমরান ভাই এবং উনার ওয়াইফ। টীমে চারজন হয়ে গেলাম ২ জন থেকে।

নীলগিরির উদ্দেশ্যে যাত্রা

সকাল ৬:৩০ এর দিকেই চাঁদের গাড়ী রিসোর্টে চলে আসলো। ৭:১০ এর দিকে গাড়ীতে উঠে যাত্রা শুরু করলাম নীলগিরির উদ্দেশ্যে । পথে বান্দরবান শোহের হিল ভিউ হোটেলের রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে নিলাম। রেস্টুরেন্টের খাবার ভালোই ছিল, স্পেশালই রুটি টা অনেক সফট ছিল গরম অবস্থায়।

নাস্তা সেরে গাড়ী আবার চলতে শুরু করলো নীলগিরির উদ্দেশ্যে। পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু রাস্তা দিয়ে যেতে ভালোই লাগছিলো, সাথে হালকা বৃষ্টির ফোটা পড়ছিল যার কারণে বাতাস অনেক বেশি ঠাণ্ডা ফিল হচ্ছিলো। অনেকটা সময় চলার পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রথম ভিউ পয়েন্টে।

আমাদের গাড়ীর ছাদে তেরপাল এর ব্যবস্থা ছিল, বৃষ্টি আসলে তেরপাল দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দেয়া যেত। মজার ব্যাপার হলও যতবারই ঢেকে দিয়েছি, তার একটু পরেই বৃষ্টি উধাও হয়ে গেছে।

প্রথম ভিউ পয়েন্ট

প্রথম ভিউ পয়েন্টে পৌছালাম ৯ টার একটু পরে, এখানে সুন্দর একটা জায়গা করা আছে ছবি তোলার জন্য। আশেপাশে অনেক দূরে ছোট বড় অনেক পাহাড় দেখা যায়। এসব জায়গার সৌন্দর্য আসলে ছবিতে বোঝার মত না, আর ছবি তোলায় বেশি মনোযোগ দিলে আসল সৌন্দর্য টাই মিস হয়ে যায়। এই ট্যুরে আমি ডিএসএলআর ক্যামেরা সাথেই নেইনি, তবুও মোবাইলে টুকটাক অনেক ছবি তুলেছি সব জায়গাতেই। প্রথম ভিউ পয়েন্টের কিছু ছবি এখানে দিচ্ছি।

দ্বিতীয় ভিউ পয়েন্ট / ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্ট

প্রথম ভিউ পয়েন্টে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে গাড়ী আবার চলতে শুরু করলো, ১০ টার দিকে পৌছালাম ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্টে। এই জায়গাটাও অনেক সুন্দর। ইয়ং ছেলেদের একটা গ্রুপ ঘুরতে এসেছিলো, তারা আমাদের সুন্দর কাপল ছবি তুলে দিলো আর তাদের ছবি তোলার মাঝেওঃ আমাদের জায়গা ছেড়ে দিলো কিছুক্ষণের জন্য। যাত্রাপথে দেখা হওয়া সেই ভাইদের ধন্যবাদ ওঃ কৃতজ্ঞতা জানাই।

এই ভিউ পয়েন্ট থেকেও অনেক সুন্দর ভিউ উপভোগ করা যায়। এখানকার কিছু ছবি দিচ্ছি।

নীলগিরি হিল রিসোর্ট

ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করে এদিকের আমাদের সর্বশেষ পয়েন্ট নীলগিরি হিল রিসোর্টে পৌঁছাতে ১৫ মিনিটের মত সময় লাগলো। ১০:৩৫ মিনিটে পৌছালাম নীলগিরি হিল রিসোর্টের সামনে। এখানে প্রবেশ করতে একেকজনের ১০০ টাকা করে টিকিট, আর পার্কিং এর জন্য ৩০০ টাকার টিকিট নিতে হয়।

টিকিট নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। মোটামুটি বড় এরিয়া নিয়েই এই রিসোর্ট, এখানে ভিউ পয়েন্ট আছে কয়েকটা, বসার জায়গা আছে, হেলিপ্যাড আছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা এখানে ঘুরেফিরে কাটালাম। সেই ঘুরাঘুরির কিছু ছবিও দিয়ে দিচ্ছি।

ওহ এইখানে জাহিদা একটা সুন্দর টাইমল্যাপ্স ভিডিও করেছে সেটাও দিয়ে দিচ্ছি।

https://youtube.com/shorts/SxZ0PKjbv0M?feature=share

চিম্বুক পাহাড়

নীলগিরি ঘোরা শেষ করে আবার উল্টো পথে যাত্রা শুরু করলাম, গন্তব্য চিম্বুক পাহাড়। চিম্বুক পাহাড়ের সামনে পৌছালাম প্রায় ১২:২০ মিনিটে। পাহাড়ের সামনে গাড়ী রেখে অল্প একটু জায়গা হেটে উঠতে হয়। এই পাহাড়ে উঠতে অবশ্য প্রতিজনের ২০ টাকা করে টিকিট নিতে হয়। চিম্বুক পাহাড় থেকেওঃ সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়, আর উপড়ে একটু সাজানো কিছু জায়গা করা আছে ছবি তোলার মত। সেখানকার কিছু ছবি দিয়ে দিচ্ছি।

শৈলপ্রপাত

চিম্বুক অভিযান শেষে এবারের গন্তব্য শৈলপ্রপাত। এটা রাস্তার পাশেই, সিঁড়ী বানানো আছে নিচে নামার জন্য। আমরা যখন গেলাম তখন ঝর্ণায় পানি খুব একটা ছিল না, ছিল না বললেই চলে অবশ্য। তবু পাথরের উপর দিয়ে হেটে এই পিচ্চি ঝর্না দেখে আসতে খারাপ লাগেনি। প্রকৃতির সৌন্দর্য বলে কথা। এই ঝর্নার কিছু ছবিও দিয়ে দিচ্ছিঃ

লাঞ্চ

আপাতত এদিকের সব স্পট দেখা শেষ, এবার লাঞ্চের পালা। ড্রাইভার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় লাঞ্চ করা যায়। উনি সাজেস্ট করলেন তাজিন ডং অথবা সকালে যেখানে ব্রেকফাস্ট করলাম ওইখানেই করতে। বেটার হিসেবে উনি সকালের টাই সাজেস্ট করলেন তাই সেটার উদ্দেশ্যেই রওনা হলাম।

লাঞ্চ আইটেম মোটামুটি ভালোই ছিল। আমরা শর্টকাট হিসেবে বিফ ট্রাই করলাম।

রিটার্ন বাস টিকিট

লাঞ্চ করে দেখলাম এই রেস্টুরেন্টের আশেপাশেই সব বাসের কাউন্টার। আগে যদিও অনলাইনে চেক করেছি সকালের দিকে কোন বাস আছে, তবুও হানিফ। শ্যামলীর কাউন্টারে গিয়ে কথা বললাম। সকালে তাদের কোন এসি বাস বান্দরবান থেকে ছেড়ে আসেনা, সব নন-এসি।

শেষমেশ রবি এক্সপ্রেস (সেন্টমার্টিং হুন্দাই) এর টিকিট নিলাম, ওঃই একটা বাসই সকাল ১১:৩০ এ বান্দরবান ছেড়ে আসে। কোনভাবেই প্রথম দিনের মত ওয়েটিং এর শিকার হতে চাচ্ছিলাম না, তাই এটার টিকিট কনফার্ম করে নিলাম। তাছাড়া আমার পছন্দের সীট ও পেয়েছি 😉

নীলাচল

বাস টিকিট করা শেষ, এবার আজকের বাকি স্পট ঘুরে আসা যাক। শুরুতেই নীলাচল। এটা বান্দরবান শহর থেকে কাছেই। ১০-১৫ মিনিট লেগেছিল সম্ভবত বাস স্ট্যান্ড থেকে। এখানেও কয়েকটা ভিউ পয়েন্ট আর সাজানো গোছানো কিছু বসার জায়গা আছে। এখানকার ছবি দিচ্ছি।

মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র

এবার দিনের সর্বশেষ স্পট, এটাও শহরের পাশেই, এখানে অনেকগুলো জিনিস আছে। প্যাডেল বোট, কায়াক বোট, ক্যাবল কার, ঝুলন্ত ব্রিজ, পিকনিক স্পট, চিড়িয়াখানা, মিউজিয়াম। তার মধ্যে আমরা ক্যাবল কার আর ঝুলন্ত ব্রিজ টা এক্সপ্লোর করেছি। কায়াক বোঁটে উঠতে গিয়েও কিছুটা রিস্কি মনে হওয়ায় বাদ দিলাম। রিস্কি বলছি কারণ এটা অনেক হালকা, আর পকেটে অনেক মূল্যবান জিনিস ছিল, সেগুলার সিকিউরিটির জন্য। হাতে সময়ও তেমন ছিল না যে এগুলো রেখে আলাদা সেশনে কায়াকিং করবো। তবে এক্সপেরিএন্স টা নিতে পারলে ভালো লাগতো, এই একটা জিনিসেই আফসোস রয়ে গেলো। ইচ্ছে আছে শীঘ্রই কাপ্তাই লেকে গিয়ে এই অপূর্নতা ঘোচাবো।

ক্যাবল কারের পুরো জার্নির একটা ছোট ভিডিও করেছি। সেটা এখানে দিচ্ছি।

মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ক্যাবল কার রাইড

রিসোর্টে ফেরার পালা

সারাদিন প্রচুর ঘুরাঘুরি হলও, এর মধ্যে সন্ধ্যাও হয়ে গেল, এবার তাই রিসোর্টে ফিরে এলাম। চাঁদের গাড়ী বিদায় দিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। সকালে বের হবার সময় সব গুছিয়ে রিসিপশনে রুমের চাবি দিয়ে গিয়েছিলাম, তারা সময়মত নতুন রুমে শিফট করে দিয়েছে, এবার তাই উঠলাম নতুন রুমে। রুম নাম্বার ১০৩।

আগের দিনের রুমের চেয়ে এই রুম দেখে অনেকটা হতাশ ই হতে হলও, এটা নীচতলায় আর পর্দা, কম্বল গুলো কেমন যেন নর্মাল টাইপের। আগের রুমের এসব জিনিস বেটার ছিল এই রুমের চেয়ে। তবে আগের দিনের রুমে ইন্টারকমের নাম্বার সহ কোন ইন্সট্রাকশন ছিল না, আর টিভির সাইজ ছোত ছিল, বারান্দায় দোলনা ছিলোনা। এসব দিক দিয়ে ১০৩ এগিয়ে ছিল।

ডিনার

রিসোর্টে ফিরেই রুমে আসার আগে ডিনার অর্ডার করে এসেছিলাম। ৯ টার দিকে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে নিলাম। আগের দিন যেহেতু ব্যাম্বো চিকেন ভালো লেগেছিল তাই আজও সেইম মেন্যু নিলাম, সাথে বাতাবি রাইস। বাতাবি রাইস টা নিলাম কারণ এটা একটু ডিফ্রেন্ট মনে হলও, টেস্ট করার জন্য। এটাতে সম্ভবত বাতাবি লেবুর পাতা দিয়েছিলো, সাথে কর্ন। খেতে একটু টক লাগছিলো। টেস্ট এর কথা বললে মোটামুটি বলা যায়। খুব বেশি ভালো না, আবার খারাপ ও না।

শেষ দিন

এবার চলে এলো বাড়ী ফেরার দিন। সকালে উঠে রেডি হয়ে গেলাম, যেহেতু বাস ১১:৪০ এ রিসোর্টের সামনে আসার কথা। সব রেডি করে রেখে ৯ টার দিকে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে, কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট, আগের দিন খুব সকালে বেরিয়ে যাওয়ায় ব্রেকফাস্ট করা হয়নি রিসোর্টে। ওরা ৮:৩০ থেকে ১০:০০ পর্যন্ত ব্রেকফাস্ট সার্ভ করে। ব্যুফে স্টাইল ব্রেকফাস্টে ছিল পরোটা, ডাল, সবজি, হালুয়া, লেমন জুস, চা আর ডিম।

রিসোর্টের আরও কিছু ছবি

এই রিসোর্টের শুধুমাত্র রিসিপশন এবং সেই ব্রেকফাস্ট ট্রাজেডি ছাড়া অন্য সবদিক দিয়ে রিকমেন্ড করার মত একটা রিসোর্ট। আমি অলরেডি তাদের ফেসবুকে মেসেজ করেছি এই ব্যাপারে, তবে জানিনা তারা আদৌ কোন স্টেপ নিবে কিনা। নিলে সেটা তাদের জন্যই ভালো হবে।

ফেরার পালা

ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুমে গেলাম, ১০:৪০ এর দিকে বেরিয়ে গেলাম, রিসিপশনে গিয়ে চেকআউট করে বাসের অপেক্ষায় থাকলাম। প্রায় সঠিক সময়েই বাস চলে আসলো রিসোর্টের সামনে, উঠে পড়লাম আর শুরু হয়ে গেলো ফেরার পথের যাত্রা।

ফেরার সময় বাস ছিল রবি এক্সপ্রেসের হ্যুন্দাই। বাস নাম্বার ৬৩০ সম্ভবত। এই বাস মনে হলও খুব একটা মেইন্টেন করেনা। শুরুতেই কেমন যেন একটা স্মেল লাগছিলো, এরপর সারা রাস্তায় অনেকটা বেশি ভাইব্রেশন ফিল হয়েছে যেটা যাবার দিন শ্যামলীর বাসে হয়নি। কুমিল্লা ক্রস করার পর গাড়ীর স্টাফরা আইডেন্টিফাই করলো গাড়ীর গিয়ারে সমস্যা আছে, যার জন্য পিছন দিকে প্রচুর নয়েয হচ্ছিলো। আমরা সামনের সিটে থাকায় খুব একটা টের পাইনি।

এই গাড়ী আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যাবার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আরামবাগ এসে গাড়ী চেঞ্জ করে আরেক গাড়ীতে করে আব্দুল্লাহপুর পাঠিয়েছে। আমরা আরামবাগেই নেমে গিয়েছি অবশ্য।

বাসায় ঢুকতে প্রায় রাত ৯:৪৫ বেজে গিয়েছিলো। আর এভাবেই শেষ হলও আমাদের ২ দিনের বান্দরবান ট্যুর!

You Might Also Like

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।