সাজেক বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফিট উপরে বসে মেঘের উড়াউড়ি উপভোগ করতে কার না ভালো লাগে। আর তাই ২ দিন কাটিয়ে আসলাম সাজেক থেকে।
Amazing Travelers এবং Destination Bangladesh এর সাথে সাজেক যাওয়াটা কিছুদিন আগে থেকেই প্ল্যান করা। নীল ভাই থাকলে প্ল্যানের অভাব হতেই পারে না 😉 এ ২ দিনেই হাজাছড়া ঝর্ণা, সাজেক হেলিপ্যাড, কংলাক পাড়া, রিসাং ঝর্ণা, আলুটিলা হেলিপ্যাড এবং আলুটিলা গুহা ঘুরে ফেলেছি।
ঢাকা – খাগড়াছড়ি যাত্রাঃ
অবশেষে প্ল্যান মোতাবেক ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রাত ১১ টার বাসে আরামবাগ থেকে রওনা হয়ে গেলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। টীমে মোট ৯ জন।
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য শ্যামলী, শান্তি পরিবহন, সৌদিয়া, সেন্ট মার্টিন ট্রাভেলস, হানিফ, ইয়ার – ৭১ এর সার্ভিস আছে। নন এসির ভাড়া ৫০০-৫৫০ এবং এসির ভাড়া ১১০০-১৫০০।
যাত্রাপথে কুমিল্লায় বিরতি ছিলো মাঝরাতে, সেখানে সবাই খিচুড়ি দিয়ে ডিনার সেরে নিলাম।
বিরতির পর বাসে উঠেই সবাই ঘুমে মগ্ন হয়ে গেলো, মিরশরাই এর পর একটা রাস্তা দিয়ে বাস যাচ্ছিলো যেটা অনেকটা উচু নিচু, দেখতেও সুন্দর। আশেপাশে শুধু জঙ্গল ছাড়া আর কিছু নেই। ভালোই লাগছিলো যখন সে যায়গা দিয়ে বাস যাচ্ছিলো, ঘুম জড়ানো চোখের কারনে ছবি/ভিডিও নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও সেটা পুরন করা আর হয়নি।
আরামবাগ থেকে বাসে উঠিয়ে সারারাত চালিয়ে সকাল বেলায় নামিয়ে দিলো মতিঝিলের শাপলা চত্বরে!
আমি সহ বাসের কয়েকজন এমন ভাবেই বলছিলাম মজা করে। এটা মতিঝিলের শাপলা চত্বর নয়, খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর।
শাপলা চত্বরেই একটা হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম, পরোটা, ভাজি আর ডিম দিয়ে। এর মধ্যেই আগে থেকে বুক করা গাড়ি হাজির। এবার খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পালা।
খাগড়াছড়ি – সাজেক যাত্রাঃ
শাপলা চত্বর থেকে সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম আর গাড়ি রওনা হয়ে গেলো বাঘাইঘাটের পথে। বাঘাইঘাটে আর্মি চেকপোস্ট আর সেখান থেকে আর্মির গাড়ি এস্কর্ট করে নিয়ে যাবে অনেকটা রাস্তা।
গাড়ি চলতে থাকলো, একটা সময় বিজিবি ক্যাম্পের কাছে পৌছে গেলাম, তারা থামিয়ে দিলো। সম্ভবত আরো কয়েকটা গাড়ি একসাথে করে পাঠানোর জন্য। আমরা রাস্তায়ই কয়েকটা ছবি নিব ভাবছিলাম কিন্তু তখন বিজিবি এর একজন সদস্য পাশে একটা ছোট টিলা দেখিয়ে দিলেন, সেখানে ছবি তোলার মত ভালো জায়গা। গেলাম সবাই মিলে সেই টিলায়, আর সবাই কিছু ছবি তুলে নিলাম। এবং আরো কয়েকটা গাড়ি আসার পর সেই স্থান থেকে বিদায় নিলাম।
বাঘাইঘাট যাওয়ার পথেও আরো একটা স্পট আছে। হাজাছড়া ঝর্ণা। বিজিবি ক্যাম্প থেকে সোজা গেলাম সেই ঝর্ণায়।
হাজাছড়া ঝর্ণাঃ
হাজাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য রাস্তার পাশেই গাড়ি রাখা হলো, এরপর কিছুটা পথ পায়ে হেটে যেতে হয়। প্রায় ১৫ মিনিট এর মত হেটে পৌছানো যায় হাজাছড়া ঝর্ণায়।
ঝর্ণা থেকে ফিরে এসে আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো এবং কিছুক্ষনের মধ্যে পৌছে গেলাম বাঘাইঘাট আর্মি ক্যাম্পে। এখান থেকেই আর্মির গাড়ি এস্কর্ট করে নিয়ে যাবে। আমরা ছাড়াও আরো অনেকগুলো গাড়ি ইতোমধ্যে এসে হাজির।
সকাল ১০ঃ৩০ এবং বিকাল ৩ঃ৩০ মিনিটে ২ বার গাড়ি যায় এখান থেকে। সাজেক থেকে ফেরার সময়ও সেইম।
এখানে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সেরে চলে গেলাম বাঘাইঘাট বাজারে। আর অপেক্ষা করতে থাকলাম আর্মির গাড়ি আসার জন্য। কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি চলে আসলো এবং সাজেকের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হলো আবারো।
একের পর এক পাহাড়ে উঠানামার মধ্য দিয়েই সাজেকের যাত্রা। যাত্রাপথে বৃষ্টি হলো মাঝে মাঝে আর সবার সামনে বসার কারনে সবচেয়ে বেশি আমিই ভিজলাম।
সাজেক পর্বঃ
অবশেষে দুপুর ১ টা বা ২ টার দিকে আমরা পৌছে গেলাম সাজেকে। মেঘ মাচাং রিসোর্টের কটেজ বুক করা ছিলো আগে থেকেই। চেকইন করে সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলাম এবং লাঞ্চের জন্য গেলাম।
সাজেকের সব হোটেল ই অর্ডার হোটেল, অর্থাৎ আগে থেকে অর্ডার করে রাখতে হয়। লাঞ্চ করতে হলে সকালে বা ডিনারের জন্য দুপুরের মধ্যে অর্ডার করে রাখতে হয়।
এদিন লাঞ্চের মেন্যুতে ছিলো ব্যাম্বু চিকেন, বাঁশ কোরল রান্না , ২-৩ ধরনের ভর্তা, ডাল।
ব্যাম্বু চিকেন এর একটা শর্ট ভিডিওঃ
মেঘ মাচাং এর লোকেশন টা অত্যন্ত চমৎকার জায়গায়। একদম সাজেকের প্রবেশমুখে বলা যায়। কটেজের বারান্দা থেকে সুন্দর ভিউ দেখা যায় মেঘ আর পাহাড়ের।
সাজেকের ভিডিওঃ
সাজেক হেলিপ্যাডঃ
বিকেলে আমরা গেলাম সাজেকের হেলিপ্যাডে। মেঘ মাচাং থেকে ১৫-২০ মিনিটের দূরত্ব মাত্র, হেটেই যাওয়া যায়। হেলিপ্যাডের উপর থেকে আশেপাশের অনেক ছোট পাহাড় দেখা যায় অনেক নিচে আর তার মাঝে মেঘের উড়াউড়ি।
বিবিকিউ এবং সোলায়মানি কফিঃ
রাতে ডিনারের পর বিবিকিউ এর জন্য স্বনামধন্য বিবিকিউ স্পেশালিস্ট সুবির ভাই সূদুর ঢাকা থেকে বিবিকিউ এর মসলাপাতি বহন করে নিয়ে গেছেন, শুধু তাই নয় নিজ হাতে কষ্ট করে বিবিকিউ চিকেন বানিয়েছেন। পরিশেষে সেই চিকেন এর টেস্ট ছিলো অসাধারন।
এছাড়াও আরেক বিখ্যাত কফি স্পেশালিস্ট সোলায়মান ভাই ঢাকা থেকে বহন করে নিয়েছেন কফি এর সকল উপকরন এবং সেই কফির টেস্ট ও ছিলো অসাধারন।
ইমরান তুহিন এর জন্মদিনঃ
১০ তারিখ আমাদের ট্যুরমেট ইমরান তুহিন ভাইয়ের জন্মদিন। রাত ১২ টার পরে তাই তাকে হালকা নাকানিচুবানি খাওয়ানো হলো। যদিও বিভিন্ন কারনে কেক অনুপস্থিত ছিলো। এই আয়োজনের ক্রেডিট আশরাফুল একা নিতে চাইলেও নীল ভাই ভাগ বসাবে।
কংলাক পাহাড় / কংলাক পাড়াঃ
দ্বিতীয় দিন একদম ভোরে ঘুম থেকে উঠেই রওনা হয়ে গেলাম কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশে। এটা সম্ভবত সাজেকের সর্বোচ্চ পাহাড়/জায়গা। গাড়িতে করে সাজেক আর্মি ক্যাম্পের কাছে গেলাম, এরপর বাকি পথ ট্রেকিং করেই উঠতে হয়। উঠার পথে একটা জায়গায় বাঁশ পাওয়া যায়। প্রতি পিচ ১০ টাকা। পাহাড়ে উঠার ক্ষেত্রে এই বাঁশ অনেক হেল্প করবে।
অনেকটা সময় হেটে এক সময় আমরা পৌছে গেলাম কংলাক পাহাড়ের চুড়ায়।
কেউ ছবি তুলে দিচ্ছিলো না বলে সায়মন রাগ করে একপাশে চলে গেলো। সেটা বুঝতে পারার পর যা হলো…

রিসাং ঝর্ণাঃ
কংলাক পাহাড় থেকে রিসোর্টে ফিরেই খিচুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম এবং সাজেককে বিদায় জানিয়ে খাগড়াছড়ির পথে রওনা হলাম। দুপুরে খাগড়াছড়ি পৌছে লাঞ্চ করলাম এবং রিসাং ঝর্ণার পথে রওনা হলাম।
রিসাং ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নামার পর অনেকটা পথ পায়ে হেটে নিচে নামতে হয়। নামার সময় সহজেই নামা যায় তবে উঠতে গেলেই কষ্ট বোঝা যায়।
রিসাং ঝর্ণায় ঝর্ণার পানি পড়ে পাথুরে একটা জায়গার উপরে, সেখানে সবাই স্লাইড করে এবং প্যান্ট ছিড়ে । অতএব এখানে আসার আগে ছেড়ার জন্য উতসর্গ করে একটা প্যান্ট নিয়ে আসা দরকার।
রিসাং ঝর্ণার ভিডিওঃ
আলুটিলা হেলিপ্যাডঃ
রিসাং ঝর্ণা থেকে গেলাম আলুটিলা হেলিপ্যাডে। এই হেলিপ্যাড থেকে খাগড়াছড়ি শহরের ভালো একটা ভিউ পাওয়া যায়।
আলুটিলা গুহাঃ
এবার আমাদের সর্বশেষ ডেস্টিনেশন, আলুটিলা গুহা। অনেকগুলো সিড়ি পার হয়ে গুহার ভিতরে একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বের হলাম।
এরই মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেলো, এবার বাড়ি ফেরার পালা। সেন্টমার্টিন হুন্দাই বাসের টিকিট করা ছিলো। বাস সাড়ে ৮ টায়। বাস কাউন্টারের কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করলাম আর বাসের সময়ের অপেক্ষায় থাকলাম। অবশেষে সময়মত বাস হাজির এবং আমাদের ফেরার যাত্রা শুরু।
সারারাত ঘুমিয়ে ঢাকায় ঢুকলাম পরদিন সকালে। এবং এভাবেই সমাপ্তি হলো অসাধারন একটি ট্যুরের।
সুন্দর লিখেছেন উজ্জ্বল ভাই 🙂
অনেক ধন্যবাদ সোহেল ভাই
দিন দিন লেখার হাত অনেক ভালো হচ্ছে …
চালাইয়া যা ।
সব সময় পড়ার জন্য এই আমাকে পাবি তোর লেখায়…
ভবিষ্যত এ যেনো ভ্রমন নিয়ে বই মেলায় বই পাই…
আবার যাবো 🙂