কিছুদিন ধরেই ইচ্ছা হচ্ছিলো মাওয়া বা চাঁদপুরে গিয়ে ইলিশ খাওয়ার। খোজ খবর নিয়ে দেখা গেল চাঁদপুর যেতে লঞ্চে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই ভেবেচিন্তে চাঁদপুর যাওয়ার ই সিদ্ধান্ত হলো। শুরুতে ৩-৪ জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত ট্যুরমেট গিয়ে ঠেকেছিল ১২ জনে।
প্ল্যান অনুযায়ী সকাল ৮ টার লঞ্চে রওয়ানা দেয়ার কথা থাকলেও সবাই সদরঘাটে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়ে যাওয়ায় ৮:৩৫ এর লঞ্চে উঠতে পারি। লঞ্চের নাম বোগদাদীয়া – ৭ । চাঁদপুরের বড় লঞ্চগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
সদরঘাটে চাঁদপুরের লঞ্চ গুলো ছাড়ে লালকুঠি ঘাট থেকে।

লঞ্চগুলোতে আগে থেকে টিকিট করতে হয় না, ভিতরে ঢোকার পরপরই চোখে পড়বে টিকিট কাউন্টার। সেখান থেকে পছন্দমত শ্রেণীর টিকিট করে নেয়া যায়। সাধারণত ডেক, চেয়ার এবং কেবিন থাকে লঞ্চগুলোতে।
বড় গ্রুপের লঞ্চ ভ্রমণ, তার ওপর ডে ট্যুর, এ অবস্থায় চেয়ারে বা কেবিনে বসে থাকা হয়না স্বাভাবিকভাবেই। তাই আমরা ডেকের যাত্রী হলাম। কখনো নীচতলায়, কখনো দোতলায় আবার কখনো ছাদে এভাবে করেই কাটল সাড়ে ৩ ঘণ্টার জার্নি।
লঞ্চে উঠার সাথে সাথেই প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো, তাই সবাই দোতলায় বসে ছিলাম অনেকটা সময়। বৃষ্টি থামার পর ছাদে উঠে পড়ি। আশেপাশে দেখা যায় প্রচুর ইটের ভাটা আর শিল্প কারখানা আরও কিছুদূর যাবার পর আশেপাশে সুন্দর প্রকৃতি ও চোখে পড়ে।
চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল এবং লাঞ্চঃ
ঠিক দুপুর ১২ টায় পৌঁছে গেলাম চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে। টার্মিনালে প্রচুর সিএনজি আর ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা রাখা। লঞ্চ থেকে নেমে উপরে ওঠার সাথে সাথেই ড্রাইভারদের ডাকাডাকিতে মাথা খারাপ হবার অবস্থা!
সোজা হেঁটে কিছুটা সামনে গিয়ে সেজান ভাইকে ফোন দিলাম। উনার ইন্সট্রাকশন মতো রওনা দিলাম থোডার পথে। জায়গাটা মূলত বড় স্টেশন পার্ক নামেও পরিচিত। ৩ নদীর মোহনা এখানেই।
ততক্ষণে লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, আশেপাশে কয়েকটা রেস্টুরেন্টে দেখলাম। ওই এলাকায় তখন বিদ্যুৎ ছিলোনা, যার ফলে এমন অবস্থা ছিল যে কোথাও বসাটাই কষ্টকর।
তবে রেস্টুরেন্ট থেকে বলল মাছ রেডি করে খাবার সার্ভ করতে ৩০-৪৫ মিনিটের মত সময় লেগে যাবে। তাই অর্ডার করে বাইরেই রাস্তার পাশে আড্ডা দিতে লাগলাম সবাই মিলে।
প্রায় ১ ঘণ্টা পর খাবার রেডি হলো, ততক্ষণে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। ভিতরে ঢুকে বসলাম লাঞ্চের জন্য আর এরই মধ্যে বৃষ্টিও হাজির! একেকজন ২ পিচ করে ইলিশ মাছ আর ইলিশ ভর্তা দিয়ে খাওয়া শেষ করলাম। ইলিশের ডিমের অপ্রতুলতার কারণে সবাই সম্ভবত ভাগেই পায়নি। যদিও আমি অল্প একটু পেয়েছিলাম। যতটুকু পেয়েছিলাম সেখান থেকেও আবার জুয়েল ভাই ভাগ বসালো।
চাঁদপুরের মিনি কক্সবাজারঃ
লাঞ্চ শেষ হতে হতে বৃষ্টিও শেষ, ভাগ্য ভালো ছিল বলতেই হবে। যাই হোক, এবারের গন্তব্য চাঁদপুরের মিনি কক্সবাজার। মূলত নদীর একটা চর। বড় স্টেশন পার্কের পাশ থেকেই নৌকা/ট্রলার ভাড়া করে যাওয়া যায়।
আমরা একটা ট্রলার ভাড়া করলাম ২ ঘণ্টার জন্য ৮০০ টাকায়।
১৫ মিনিটের মত লাগলো পৌঁছাতে, কিন্তু মিনি কক্সবাজার তো অলরেডি ডুবে গেছে, চর উপর থেকে দেখা যাচ্ছিলো না, অর্থাৎ হয় নৌকায় বসে থাকতে হবে নয়তো নদীতে নেমে গোসল করতে হবে। দ্বিতীয় অপশনের প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিলাম প্রায় সবাই, আর তাই ৩ জন ছাড়া বাকি সবাই নেমে গেলো নদিতে গোসল করতে। প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও হঠাত নামতে ইচ্ছে হলও না, তাই আমিও হয়ে গেলাম সেই ৩ জনের একজন।
চাঁদপুরের বিখ্যাত ওয়ান মিনিট আইসক্রিমঃ
গোসল শেষ, মিনি কক্সবাজার ঘোরাও শেষ। এবার পালা চাঁদপুরের বিখ্যাত এক জিনিস টেস্ট করার। সেটা হলও ওয়ান মিনিট আইসক্রিম। মূলত দোকানের নাম ওয়ান মিনিট, তাদের বিক্রিত আইসক্রিমের নাম সেখান থেকেই হয়ে গেছে ওয়ান মিনিট আইসক্রিম।
আইসক্রিমের পাশাপাশি তাদের রসমালাই ও খেলাম। রসমালাই টা অনেক ভালো ছিল। এছাড়া সোহাগ ভাই, আশরাফুল সহ কেউ কেউ মিষ্টি, সন্দেশ ও খেয়েছে। সেগুলোও ভাল ছিল তাদের রিভিউ অণুযায়ই।
চাঁদপুরের রুপালী ইলিশ কেনাঃ
আমার পছন্দের তালিকায় যে কয়টা মাছ আছে, তার মধ্যে ইলিশ হল নাম্বার ওয়ান। আসলে ইলিশ আর চিঙড়ি ছাড়া তেমন কোন মাছ খাইই না আমি। তাই চাঁদপুর ভ্রমণের সাথে ইলিশ কেনাটাও একটা মুখ্য অংশ ছিল।
আইসক্রিম খাওয়া শেষে আমরা চলে গেলাম বড় স্টেশন মাছের বাজারে। এখানে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যায়।
ফেরার পালা
ইলিশ কিনতে কিনতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলো, তাড়াহুড়া করে লঞ্চঘাটে এসেও শেষ রক্ষা হলও না। বড় লঞ্চ ছেড়ে চলে গেছে ইতোমধ্যেই। সামনে দাঁড়িয়ে আছে ছোটখাট একটা লঞ্চ, তাও ছাড়বে প্রায় ১ ঘণ্টা পর।
কি আর করা, এটাতেই উঠে পরলাম। কিন্তু কেবিন/সীট কোন কিছুই আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাকা নেই। উপায়ান্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ডেকের যাত্রী হলাম দ্বিতীয়বারের মত, তবে এবারের অভিজ্ঞতা সকালের মত সুখকর হলও না 🙁

প্রায় ৪ ঘণ্টা লঞ্চ চলার পর অবশেষে সদরঘাটে নামলাম রাত ১১ টায়। সেখান থেকে সবাই যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম আর এভাবেই একটি ডে ট্যুরের সমাপ্তি ঘটলো।
সোহাগ ভাই বলতে কাকে বুঝিয়েছেন? আমাকে? নাকি সোহাগ ভাইকে? 😐